গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না-জানা জরুরি

গর্ভবতি মেয়েকে পুষ্টিকার খাবার খাওয়াতে হয়, তবে অনেকেই জানি না গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না বা গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

বাড়িতে কোন মেয়ে গর্ভবতি হওয়া মানেই বাড়িতে নতুন অতিথি আগমনের আনাগোনা। এই সময়টা প্রতিটি মেয়ের জন্য খুবিই আনন্দের। একটি শিশুর জন্মের সাথে সাথে একজন মায়ের ও জন্ম হয়। তবে এই গর্ভকালীন সময়টাকে সতর্কতার সাথে কাটাতে না পারলে পরিবারে নেমে আসতে পারে দূঃখের ছায়া।

গর্ভকালীন সময়ে একজন মেয়ের শরীরের ভেতরে বেড়ে ওঠে আরও একটি প্রান। এই নবজাতক শিশুটিয় হবে আগামির ভবিষ্যৎ। আর এই আগামির ভবিষ্যৎকে সুস্থ সবল রাখতে গর্ভবতী নারীকে যত্ন নিতে হবে। মনে রাখবেন গাছ সুস্থ থাকলেই আপনি সেই গাছ থেকে ভালো ফল পাবেন।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী এটা আমরা সবাই জানি তবে আমাদের চারপাশে এমন কিছু সাধারণ ফল, সবজি বা খাবার আছে যেগুলো খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। তাই সকল গর্ভবতী মেয়েদের এই খাবার গুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত্য জরুরী। আজ আমি আপনাদের সেসব খাবার সম্পর্কে জানাবো যেগুলে থেকে গর্ভবস্থায় দূরে থাকায় ভালো।

Table of Contents

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না বা গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না তা নিচে আলোচান করা হল:

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে কি হয় ?

পেপে অত্যন্ত্য পুষ্টিকর একটি খাবার। কথায় আছে ” বেশি বেশি পেপে খান বাড়ির বাইরে ডাক্তার তাড়ান ”। তবে একজন সাধারণ মানুষের জন্য পেপে যতটা উপকারী একজন গর্ভবতী মহীলার জন্য এই পেপে তার থেকে অনেক বিশি বিপদজনক। পেপেতে রয়েছে ল্যাটেক্স নামের এক ধরনের উপাদান যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে কাচা পেপে বা আধা পাকা পেপেতে এই ল্যাটেক্স বিদ্যবান। ল্যাটেক্স মুলত জরায়ুর শক্তিশালী পেশিকে সংঙ্কুচিত করে থাকে তাই ডাক্তাররা মনে করেন কাচা বা আধা পাকা পেপে গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ না ও হতে পারে। পাকা পেপেতে এই উপাদান থাকে না। তবে ঝুকি না নিয়ে কাচা বা পাকা সব ধরনের পেপে পরিহার করা শ্রেয়।

গর্ভাবস্থায় কফি খাওয়া যাবে কি ?

বর্তমান সময়ে আনেক ছেলেমেয়েদের চা কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। অফিসে বা বাসায় কাজ করতে করতে যখন আমাদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ আসে তখনই এক কাপ কফি আমাদের শরীরে শক্তি ফিরিয়ে দেয়। তবে যদি আপনি গর্ভবতী হন তাহলে এই কফি বা চা  থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। কারন কফি বা চা তে ক্যাফেইন থাকে। এই ক্যাফেইন গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই চা কফির পরিবর্তে লেবু আর ভাখের গুড়ের শরবত পান করে ক্লান্তি দূর করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় ?

আনারস খেলে মুখে রুচি বাড়ে। তবে আনারসে রয়েছে ব্রোমেলাইন নামক উপাদান। এই ব্রোমেলাইন জরায়ুর পথকে কোমল করে যা ব্যাথার স্রষ্টি করতে পারে। অনেক সময় গর্ভবতী নারী আনারস খেলে তার পাতলা পায়খানা দেখা দিতে পারে। যদিও এটি একটি টক-মিষ্টি মুখরচক খাবার তবুও এটি গর্ভাবস্থায় না খাওয়ায় ভালো।

গর্ভাবস্থায় আধা সিদ্ধ ডিম খেলে কি হয় ? বা গর্ভাবস্থায় ডিম পোচ

সিদ্ধ ডিম একটি উপাদেয় খাদ্য তবে আধা সিদ্ধ ডিম গর্ভবতি মেয়ের জন্য খুবিই বিপদজনক। শুধু আধাসেদ্ধ ডিম নয় আধা সেদ্ধ মাংস ও খাওয়া উচিৎ নয়। আধাসেদ্ধ ডিম ও মাংসে সালমোনেল ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া ও বিভিন্ন্য ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যদি কোন গর্ভবতি গর্ভধারনের শুরুর দিকে এই আধাসেদ্ধ ডিম বা মাংস খায় তবে তার গর্ভপাত ঘটতে পারে। তাই ডিমের পোচ, হাফ বয়েল ডিম, হাফ সেদ্ধ মাংস, মুরগির গ্রিল যতটা সম্ভব পরিহার করুন। প্রানীজ আমিষ যথাযথ ভাবে সিদ্ধ করে, ভালোমতো রান্না করে তারপর খাবেন।

গর্ভাবস্থায় সজনে ডাটা খাওয়া যাবে কি ?

সজিনা ডাটা এবং সজিনার পাতা দুটিই পুষ্টিকর সবজি। গ্রামা অঞ্চলে এটি একটি সহজলভ্য সবজি। সজিনাতে ”আলফা সিটেস্টেরল” নামক উপাদান রয়েছে। এই উপাদান এনেক সময় গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই সজিনা ডাটা বা সজিনা পাতার সবজি খাওয়া থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া যাবে কি ?

গর্ভবতী নারীদের শেষের তিন মাস আঙ্গুর খাওয়া যাবে না। আঙ্গুরে থাকে রেসভেরাট্রল নামক যৌগ । যা হরমোনের ভারসাম্যহিনতা তৈরী করতে পারে। আঙ্গুর শরীরে তাপ উৎপাদন করে যা মা ও শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে কি ?

গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলুন। সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমান বেশি থাকে। এই পারদ ভ্রুণের মস্তিস্কের বিকাশে বাধা দেয়। তাই আপনি যদি চান আপনার বাচ্চার মস্তিস্ক সাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠুক তাহলে আপনাকে অবশ্যই সামুদ্রিক মাছ পরিহার করতে হবে। সামুদ্রিক মাছের পরিবর্তে আপনি মিঠা পানির মাছ খেতে পারেন এতে আপনার বাচ্চার কোনো ক্ষতি ও হবে না আবার মাছের পুষ্টিগুন থেকে ও বঞ্চিত ও হবেন না।

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি ?

করলা সাধারণ মানুষের জন্য খুবিই ভালো খাবার। তবে গর্ভবতী মায়ের জন্য  এটি মোটেও ও ভালে খাবার না। করলায় রয়েছে গ্লাইকোলাইসিস, মারোডিসিন, সেপোনিক নামক পদার্থ যা গর্ভবতী মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ তৈরি করে এবং গর্ভের বাচ্চার ও ক্ষতি করে। তাই গর্ভে বাচ্চা থাকা অবস্থায় করলা সবজিটি এড়িয়ে চলায় ভালো।

গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা কি খাওয়া যায় ?

সাধারণত রূপচর্চায় অ্যালোভেরা ব্যাবহার করা হয়। আনেকে পেট পরিষ্কার রাখতে বা শরীর ঠান্ডা রাখতে অ্যালোভেরার জুস খেতে পছন্দ করে। সাধারণ সময়ে এটি উপকার করলেও গর্ভকালীন সময়ে এটি মারাত্বক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। অ্যালোভেরায় যেসব উপাদান থাকে তা গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পরে। তাই গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, তবে রুপচর্চায় ব্যাবহার করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় কাচা মুলা

আনেকেই কাচা মুলা সালাদ হিসেবে খেতে পছন্দ করেন। গর্ভকালীন সময়ে কাচা মূলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাচা মূলায় থাকে লিসটেরিয়, সালমোনিলা জাতীয় ব্যাকটেরিয়া।

গর্ভাবস্থায় অঙ্কুরিত বীজ

কাচা অঙ্কুরিত বীজ গর্ভবতী নারীর স্বাস্থের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। খাদ্য শষ্য, শীম, শীমের বীজ এই খাবার গুলো গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উত্যম।

গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়া যাবে কি

বেগুন একটি অতি পরিচিত সবজি। বেগুন ছাড়া যেনো আমাদের তরকারী পরিপূর্ণতা পায় না। মাছের সাথে বেগুন বাঙালির সাধারন খাবার। তবে গর্ভবতী মেয়েদের বেগুন না খাওয়ায় ভালো। অনেক সময় বেগুন খেলে গর্ভবতী মেয়েদের ঋতুস্রাব দেখাদিতে পারে। তাছাড়া যদি কারো শরীরে এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে ও বেগুন পরিহার করা উত্যম। তাছাড়া বেগুন উৎপাদনে প্রচুর কীটনাশক ব্যাবহার করা হয় এই কীটকাশক যুক্ত খাবার ভ্রুণের জন্য ক্ষতিকার।

গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার কিছু উপকারী টিপস

গর্ভাবস্থায় ভালো থাকতে নিয়মিত কিছু উপাদেয় খাদ্য খেওয়া উচিত, তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কালোজিরা রাখতে পারেন। কালোজিরা খেলে গর্ভপরবর্তী সময়ে বুকের দুধ বৃদ্ধি পবে। কালোজিরা কিভাবে ব্যবহার করবেন তা বিস্তারিত জানতে CLICK HERE এই লেখাটি পড়তে পারেন।

গর্ভাবস্থায় অনেকের প্রেশার লো হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ প্রেশার লো হয়ে গেলে কিভাবে দ্রুত প্রেশার বা ড়ানো যায় তা বিস্তারিত জানতে CLICK HERE এই লেখাটি পড়তে পারেন

আরো উপকারী টিপস জানতে CLICK HERE এই ইন্টারন্যাশনাল সাইটটি ভিজিট করুন।

পরিশেষে বলা যায় উপরে উল্লিখিত খাদ্য গুলো পরিহার করে যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। একজন সাভাবিক মানুষের শরীরে যে পরিমান পুষ্টি চাহিদা থাকে, একজন গর্ভবতী মহিলার তার থেকে ও বেশি পুষ্টি চাতিদা থাকে। তাই একজন নারী সাভাবিক সময়ে যে পরিমান খাবার খায়, গর্ভকালীন সময়ে তার থেকে আনেক বেশি পরিমান ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয় উচিত।

Leave a Comment

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial