ঢাকার দর্শনীয় জায়গা গুলোর মধ্যে আন্যতম হলো চন্দ্রিমা উদ্যান। আজ আমি চন্দ্রিমা উদ্যান কোথায় অবস্থিত এবং চন্দ্রিমা উদ্যানের ইতিহাস আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। চন্দ্রিমা উদ্যানের আরেক নাম জিয়া উদ্যান।
ইট পাথরের এই নগরিতে এই চন্দ্রিমা উদ্যান যেন এক সবুজ প্রকৃতির লিলাভুমি। শহরের অনেকেই যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেতে এখানে এসে আবসর সময় কাটান। এখানেয় শায়িত আছেন শহীদ প্রেসেডেন্ট জিয়াউর রহমান। তবে এই উদ্যানের আনেক কিছুই আমাদের অজানা।
চন্দ্রিমা উদ্যান কোথায় অবস্থিত ?
এই উদ্যানটি ঢাকার শেরে বাংলা নগরিতে ক্রিসেন্ট লেকের তীরে আবস্থিত অবস্থিত। এই চন্দ্রিমা উদ্যানের দক্ষিন দিকে জাতীয় সংসদ ভবন অবস্থিত এবং পশ্চিমে রয়েছে গণভবন। এই উদ্যানটি ৭৪ একর বা ২২৩ বিঘা এরিয়া জুড়ে বিস্তৃত।
চন্দ্রিমা উদ্যান বা জিয়া উদ্যানের নামকরণ
অনেকের মতে এখানে চন্দ্রিমা নামে একজনের বাড়ি ছিল, সেই বাড়ির মালিকের নাম অনুযায়ি এ স্থানের নাম লোক মুখে প্রচলিত হয় চন্দ্রিমা উদ্যান। আবার অনেকের মতে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেকের সাথে মিল রেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ এর নামকরণ করেন চন্দ্রিমা উদ্যান। এই নামেই উদ্যানটি বহুদিন পরিচিত ছিল, সে সময় এই জমি খাস জমি হিসেবে ব্যবহ্যত হত এবং এখানে বিভিন্য গবাদি পশুর চারনভুমি ছিল।
পরবর্তিতে ১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর মরদহে এই উদ্যানে সমাধিস্ত করা হয়। পরবর্তিতে যখন বেগম খালেদাজিয়া সরকার প্রধান হন তখন এই উদ্যানটির নামকরণ করা হয় জিয়া উদ্যান। ১৯৯৬ আওয়ামী লীগ খমতায় এসে এই উদ্যানের নাম আবারো চন্দ্রিমা উদ্যান করেন। পরে আবার যখন বিএনপি সরকার আসে তখন এই স্থানের সার আবার জিয়া উদ্যান করা হয়। পরবর্তিতে ২০০৯ সালে আওয়ামিলিগ খমতয় আসার পর এই স্থানের নাম চন্দ্রিমা উদ্যান করা হয়। তবে এউ উদ্যানটি জিয়া উদ্যান এবং চন্দ্রিমা উদ্যান দুইটি নামেই জনসাধারণের কাছে সমান ভাবে পরিচিত।
কিভাবে জিয়া উদ্যানে যাবো ?
যদি আপনি মেট্র যোগে যেতে চান তাহলে আপনাকে যেকোনো মেট্র স্টেশন থেকে “ বিজয় সরণি “ মেট্রো স্টেসনে নামতে হবে। আর এই স্টেশনের পশ্চিম পাশেই জিয়া উদ্যান বা চন্দ্রিমা উদ্যান অবস্তিত।
কোথাও ভ্রমনে যাওয়ার সময় কিছু প্রয়োজনীয় জিনেস নিজের কাছে রাখবেন যেমন: কিছু শুকনা খাবার, খাবার স্যালাইন এবং সাধারণ কিছু ঔষধ। অনেকের বেশি হাটাহাটি করলে প্রেশার লো হয়ে যায়। প্রেশার লো হয়ে গেলে খাবার স্যালাইন খেলে দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরে আসে। প্রেশার লো হলে কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে CLICK HERE এই ব্লগটি পড়তে পারেন।
জিয়া উদ্যানের কিছু দর্ষনীয় স্থান
- দর্ষনিয় স্থাপনা ও স্থান
- সমাধি কমপ্লেক্স
- ক্রিসেন্ট লেক ও ফোয়ারা
- ঝুলন্ত সেতু
- মসজিদ ও মেমোরিয়াল হল
- সুশোভিত বাগান
- খোলা চত্বর
- পুকুর
- শরীর চর্চা কেন্দ্র
সমাধি কমপ্লেক্স
এই উদ্যানে রয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স। ২০০২ সলের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই সমাধি কমপ্লেক্স তৈরির প্রকল্পটি হাতে নেয়। এই প্রকল্পটির নকশা করেছিলেন প্রয়াত স্থপতি রাজিউল আহসান। সমাধিকে ঘিরে রয়েছে ৩৬ ফুট ব্যাসের বেদি যা পুরোটা মার্বেল পাথর দ্বারা মোড়ানো। কবর ও বেদির মধ্যবর্তি স্থান কালো ট্রান্সপারেন্ট পাথর দিয়ে ঢাকা। ভুমি থেকে ৩৭ ফুট উচ্চতায় দাড়িয়ে আছে স্টিল ও কাচের তৈরি চাদোয়া ছউনি। সমাধি কমপ্লেক্সে ঢোকার রাস্তা আছে ৪ টি। মুলত এই কমপ্লেক্সটিকে কেন্দ্র করেই পুরো উদ্যানের রাস্তার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ক্রিসেন্ট লেক ও ফোয়ারা
সমাধি কমপ্লেক্সের দক্ষিনে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেক অবস্থিত । এই লেকের একপাশ জুড়ে দর্শণার্থীদের বসার জন্য দর্শনীয় তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্যানে ঢোকার জন্য এই ক্রিসেন্ট লেকের উপর দিয়ে একটি ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা হয়েছে। এই ঝুলন্ত সেতুর দুইপাশে দুইটি পানির ফোয়ারা রয়েছে । সাধারণত সন্ধার পর রঙ্গিন আলোর সাথে এই ফোয়ারা গুলো চালু করা হয় যা এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারনা ঘটায়।
ঝুলন্ত সেতু
ক্রিসেন্ট লেকের ওপর যে নয়নাভিরার ঝুলন্ত সেতুটি রয়েছে তার বাস্তবায়নে ব্যায় হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও প্রধনমন্ত্রী খালেদাজিয়া ২০০৪ সলের ৭ ই নভেম্বর ব্রিজটি উদ্ভোদন করেন। ব্রিজটি দাড়িয়ে আছে আরসিসি আর্চ আর স্টিল হ্যাঙ্গারের ওপর। সবথেকে আবাক করা ব্যাপার হলো এই ব্রিজের পাটাতন বা ডেকে ব্যাবহার করা হয়েছে উন্নত মানের টেম্পার্ড গ্লাস। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এই গ্লাস ভেঙ্গে পড়বে না কারণ এগ্লাসের পুরুত্ব ৩১ মিলিমিটার। গ্লাসগুলো বসানো আছে স্টিলের ফ্রেমের ওপর। সব মিলিয়ে ব্রিজটির ওজন ১২০ টন আর ব্রিজটি ২০০ টনের ও বেশি ওজন ধারন করতে পারবে। সেতু পথটিকে আলোকময় করার জন্য ব্রিজের নিচে ব্যাবহার করা হয়েছে ৩০ টি বিশেষ ধরণের লাইট।
মসজিদ ও মেমোরিয়াল হল
সমাধি কমপ্লেক্সের উত্তরে রয়েছে দ্বিতল ভবন। ২০০৬ সালের ১৯ শে মার্চ তারিখে এটি উৎবোধন করেন তৎকালীন গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। এই ভবনের উপরে রয়েছে মসজিদ এর নিচে আর্কইভ ও গবেয়ণাগার, পাঠাগার ও সেমিনার হল। এ হলের লোক ধারন ক্ষমতা ১০০ জনের বেশি।
সুশোভিত বাগান
উদ্যানের ভিতরে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা। কিছু গাছ লগানো হয়েছে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। এখানে অনেক ফলের গাছ ও রয়েছে যেমন আম, জাম, কাঠাল, কলা ইত্যাদি।
খোলা চত্তর
বাগানের ভেতর রয়েছে শিরা উপশিরার মতো বিসতির্ন ইটের রাস্তা। এখানে আনেকেই আসে সকালে হাটাহাটি করতে। আপনার মন যত খারাপই থাকুক না কেন এই সবুজে ঘেরা রাস্তায় একটু হাটাহাটি করলে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য।
পুকুর
সমাধি কমপ্লেকের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে রয়েছে দুইটি ছোট ছোট পুকুর। তবে রক্ষনাবেক্ষনের আভাবে পুকুর দুটি আজ মৃতপ্রায়।
শরীর চর্চা কেন্দ্র
এখানে আছে চন্দ্রিমা ফিটনেস ক্লাব নামে ১০০০ সদস্য বিশিষ্ট দেশের সবথেকে বড় ফিটনেস ক্লাব। ফিটনেস ক্লাবের পাশাপাশি এখানে স্কেটিং ক্লাব, মার্শাল আর্ট ক্লাব ও রয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য সর্বদা ২৫-৩০ জন আনসার ও পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকে। তারপরেও আপনারা সতর্ক থাকবেন কারন যেখানেই লোকসমাগম থাকে সেখানেই অসাধু লোকেরা তাদের সার্থসিদ্ধি করার চেষ্টা করে।