প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে। লো প্রেশার কি ?

আজ আমি আলোচনা করবো প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে। সেই সাথে আমি এটাও আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে। আমার দেওয়া পদ্ধতি গুলো ফলো করলে আপনি কিছুক্ষনের মধ্যেই সুস্থতা আনুভব করবেন।

স্বাস্থয় সুখ, স্বাস্থয় সম্পদ। ‍যদি আপনার শরীর ভালো থাকে তাহলে পুরো পৃথিবীটা রঙ্গিন মনে হবে, আপনি উপভোগ করতে পারবেন পৃথিবীর অপরুপ সৌন্দর্যকে। অন্যদিকে আপনার শরীর যদি ভালো না থাকে তাহলে তাহলে এই রঙ্গিন পৃথিবীটাকে আপনার কাছে দূর্বিষহ হয়ে দাড়াবে। তাই জীবনকে উপভেঅগ করতে আমাদের সকলকে সুস্থ থাকতে হবে।

আমাদের শরীরে যেসব সাধারণ রোগ আছে তার মধ্যে একটি হলো প্রেশার লো হওয়া। মেডিকেলের ভাষায় এই রোগটিকে বলা হয় হাইপোটেনশন। এটা চিরস্থায়ী কোন রোগ নয়। নিয়মিত সুসম  খাবার খেলে হইপোটেনশন থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ বা হায় প্রেশার যেমন বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে তেমনি নিম্নরক্তচাপ বা হাইপোটেনশন ও আপনার জন্য বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। তাই আমাদের সকলের জানা উচিত নিম্নরক্তচাপ এর লক্ষণ ও তার প্রতিকার। আজ আমরা এই নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেশার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

লো প্রেশার কি ?

সাধারন মানুষের সভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। এ রক্তচাপ যদি ১২০ / ৮০ থেকে ৯০/৬০ এর মধ্যে থাকে তাহলেও এটাকে সাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়। তবে এটা যদি ৯০/৬০ এর নিচে চলে আসে তাহলে এটাকে বলে নিম্নরক্তচাপ, লো প্রেশার বা হাইপোটেনশন।

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

লো প্রেশারের প্রধান  লক্ষণ হলো শরীর দুর্বল হওয়া ও মাথা ঘোরানো। অনেকের প্রেশর লো হলে বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময়  প্রেশার লো হলে রোগী চোখে ঝাপসা দেখে। লক্ষণগুলোর রোগীভেদে বিন্যতা দেখা দিলেও শরীর দূর্বল হওয়া বা শরীরে ক্লান্তী অনুভুত হওয়া এই রোগের একটি কমন লক্ষণ। অনেকেই বলেন অনেক্ষণ কসে থাকার পর হঠাৎ উঠে দাড়ালে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে, এটা ও একটি নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ।

লো প্রেশার কেনো হয় ?

লো প্রেশার দুই ধরনের হয়ে থাকে্। কিছু কিছু মানুষের দীর্ঘস্থায়ী ভাবে এই রোগ হয়ে থাকে আবার কিছু কিছু মানুষের ক্ষনস্থায়ী ভাবে এটির শিকার হন।

যদি কোন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতন থাকে এবং পরিমিত খাবার খেয়ে শরীরের পুষ্টি চাহিদা না মেটায় তাহলে তারা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে এ রোগে ভুগতে পারে। আমাদের সমাজে অনেকেই আছে যারা অত্যধিক কাজের প্রেশারে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহন করার সুযোগ পায় না। এই ধরনের মানুষ ও অদুর ভবিষ্যতে লো ব্লাড প্রেশারে ভুগতে পারে।

অনেকের ক্ষেত্রে এ রোগ ক্ষণস্থায়ী, যেমন কে যদি ক্ষুধা পেটে অনেক সময় অতিবাহিত করে তাহলে সে ক্ষনিকের জন্য হাইপোটেনশনে ভুগতে পারে।

আনেক সময় গর্ভবতি মেয়েদের প্রেশার লো হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে গর্ভবতী মেয়েকে নিয়মিত কিছু পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত এবং কিছু খাবার থেকে বিরত রাখা উচিত। কোন ধরধের খাবার থেকে গর্ভবতী মেয়েদের বিরত রাখা জারুরি তা জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

যদি কেউ কঠোর পরিশ্রম বা ব্যাম করে সেক্ষেত্রে ও তার প্রেশার ক্ষনিকের জন্য কমে যেতে পারে। যদি আপনি কখনো জিমে গিয়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন প্রথম দিন জিম করার পর শরীর ক্লান্ত লাগে আবার অনেক সময় বমি বমি ভাব লাগে। এর মুল কারন নিম্ন রক্তচাপ।

বেশি পাতলা পায়খানা হলেও প্রেশার লো হয়ে যেতে পারে। তাছাড়াও যে কোনো রোগে আক্রান্ত হলেও প্রেশার কমে যেতে পারে।

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে ?

আনেক সময় বেশি পরিশ্রম বা অন্য কোন কারনে প্রেশার লো হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক প্রেশার বাড়ানোর জন্য নিম্নবর্ণিত পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।

  1. তরল বা সুপ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। সবুজ সবজি গরম পানিতে ফুটিয়ে সাধে কিছু লবণ মিশিয়ে খেলে দ্রুত ব্লাড প্রেশার বাড়বে।
  2. ৫-৭ টি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে সে পানি খেলে দ্রুত উপকার পাবেন। কিসমিস ভেজানো না থাকলে ৫-৭ টি কিসমিস চিবিয়ে খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করুন।
  3. দ্রুত প্রেশার বাড়াতে  খাবার স্যালাইনের গুরুত্ব অপরিশিম। আধা লিটার পানিতে ১ টি স্যালাইন গুলিয়ে ২ ঘন্টার মধ্যে ২ বারে পান করুন, দেখবেন দুত উপকার পাচ্ছেন। এটি যেমন সহজ লভ্য তেমনি উপকারি। আপনার পাড়ায় যে কোনো ফার্মেসিতে বা মুদি দোকানে ও খাবার স্যালাইন পেয়ে যাবেন।
  4. হাসের ডিম হাইপোটেনেশন রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। যদি হাসের ডিম না পান তাহলে মুরগির ডিম ও খেতে পারেন। 
  5. বাদাম প্রেশার বাড়াতে সাহায্য করে। এটি প্রেশার বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে শক্তি যোগাবে।
  6. লবণ আর পনি খেয়ে ও আপনি আপনার শরীরের প্রেশার ক্ষনিকের জন্য বাড়িয়ে নিতে পারেন।
  7. ডাবের পানিতে আছে সোডিয়াম যা প্রেশার বাড়াতে সাহায্য করে। দ্রত প্রেশার বাড়াতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
  8. ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় শরীরে দ্রুত শক্তি দেয় এবং রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে। তাই দ্রুত প্রেশার বাড়াতে কফি খেতে পারেন। হাতের কাছে কফি না পেলে চা ও খেতে পারেন।

এতক্ষন আপনারা জানলেন হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে তাৎক্ষনিক কিভাবে প্রেশার বাড়াবেন। তবে নিয়মিত সুষম খাবার না খেলে বারবার আপনি এই সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে আপনি যদি কিছুটা খাবার দাবারের প্রতি সচেতন হন তাহেলে খুব সহজেয় লো প্রেশার বা হাইপোটেনশনকে চিরতরে বিদায় করতে পারবেন।

কিভাবে লো প্রেশারকে চিরবিদায় জানাবেন

কিভাবে আপনি লো প্রেশার বা নিস্নচাপ বা হাইপোটেনশনকে চিরবিদায় জানাবেন তা নিচে আলোপনা করা হয়েছে।

  • দিনে ২.৫ খেকে ৩ লিটার পানি পান রার চেষ্টা করবেন। শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গেলে রক্তচাপ নেমে যায়। সবসময় নিজের সাথে একটি পানির বতল রাখবেন এবং কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • প্রতিদিন খাবারের সাথে ডাল খাবেন। ডালে বেশি করে পানি দিয়ে রান্না করে তিন বেলা খাবারের সাথে খেলে শরীরের দূর্বলতা কাটবে। মনে রাখবেন মশুর গালে গরুর মাংসের থেকে বেশি প্রটিন আছে।
  • খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস রাখুন। প্রতিদিন যদি পরিমিত পরিমান প্রণীজ আমিষ গ্রহন করেন তাহলে শরীর দূর্বলতা জনিত রোগ বাসা বাধতে পারবে না।
  • দিনে এক কাপ কফি খেতে পারেন। তবে বেশি কফি পান করলে অনিদ্রা বা ক্ষুধাহীনতায় ভুগতে পারেন। তাই পরিমিত পরিমান ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাবেন।
  • প্রতিদিন একটি করে ডাব খেতে পারেন। যদি প্রতিদিন খেতে না পারেন তবে সপ্তাতে ১-২ টি ডাব খেতে পারেন।
  • যেকোনো ধরনের বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পনি সহ বাদাম চিবিয়ে খেতে পারেন। 
  • ডাবের মতো বিটের রসে সোডিয়াম থাকে। তাই নিয়মিত বিটের জুস খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন সানা, মাখন, দই, ঘি ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। টক ফলে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। তাই কমলা, পাতি লেবু, মাল্টা ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।
  • লো প্রেশারকে চিরতরে দূর করদে খাদ্য তালিকায় কালোজিরা যোগ করুন। কালো জিরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

উপরের বলা পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে আশা করি আপনাকে লো প্রেশারের কারনে ডাক্তারের  কাছে দৌড়ানো লাগবে না। তবে ‍যদি অন্য কোন শারীরিক সমস্যার কারণে লো প্রেশার বা রক্তচাপের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিবেন।

If you want to know more about blood pressure, You can visit this site WHO

Leave a Comment

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial