এক দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ | cox bazar sea beach

পৃথিবীর সবথেকে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত cox bazar sea beach. আজ আমি এক দিনের ভ্রমণে যাচ্ছি কক্সবাজার। বিস্তারিত জানাবো আজকের ব্লগে।

cox bazar sea beach

Cox bazar sea beach video

নীল জলরাশি, শেষ নেই যার সীমা,
প্রতিটি ঢেউ যেন বলে যাচ্ছে এক অনন্ত কাব্য—
স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি, এক নীরব প্রেমের নাম—কক্সবাজার

এই শহর শুধু চোখে দেখা যায় না,
একে অনুভব করতে হয় মন দিয়ে, নিঃশ্বাসে, নীরবতায়।

চলো বন্ধুরা—আজ ডুবে যাই কক্সবাজারের রূপে,
দেখি এক সমুদ্রভরা দিন, এক মুগ্ধতার গল্প।

হ্যা বন্ধুরা আমি আজকের পর্বটি সাজিয়েছি আমার কক্সবাজার ভ্রভন অভিজ্ঞতা নিয়ে। আজকের পর্বে থাকছে বীচে আমার হর্স রাইডিং, সমুদ্রের নোনা জলে গা ভেজানো,  ট্যুরমেটদের সাথে কাটানো অসাধারণ কিছু মুহুর্ত সহ নানা রকম একটিভিটিস এর অভিজ্ঞতা।

cox bazar sea beach কিভাবে যাবো ?

আমি যাচ্ছি বাংলাদেশ ট্যুর গ্রুপ (বি টি জি) এর সাথে। প্রতি সপ্তাতে এই গ্রুপের ইভেন্ট থাকে। আমি যেহেতু সপ্তাতের শুরুতেই বুকিং দিয়েছেলাম তাই আমার সিট সামনের দিকেই দিয়েছে। আমার সিট নাম্বার সি ১।

আনুমানিক রাত সাড়ে দশটার দিকে আমাদের বাসটি একদল ভ্রমন পিপাসুদের নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসার পর, রাতের খাবার খাওয়া ও প্রয়োজনিয় কাজ সেরে নেয়ার জন্য কুমিল্লায় ২০ মিনিটের যাত্রা বিরতি দেওয়া হয়। খওয়া দাওয়া শেষে বাস আবার চলতে শুরু করলো দুরন্ত গতিতে। সিটে বসে ঘুমিয়ে গেছেলাম, হঠাৎ চোখ খুলতেই দেখি ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে আর আশেপাশে সবুজে ঘেরা কিছু পাহাড় দেখা যাচ্ছে।

অবশেষে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা পৌছে গেলাম আমাদের গন্তব্য, কক্সবাজারে। বহুল পরিচিত ডলফিন মড় থেকে একটু দুরে আমাদের বাস দাড় করানো হয়। 

এখান থেকে বি টি জি গ্রুপের যে দুজন হোস্ট আমাদের সাথে ছিল তারা আমাদের নিয়েযায় তাদের পূর্বনির্ধারিত খাবারের হোটেলে। 

এই হোটেলেই আমরা সকলে যে যার মত ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে নেই। 

বলে রাখা ভালো সকালের ও দুপুরের খাবারের বিল আমাদের দেওয়া লাগেনি কারণ এগুলো ইভেন্ট ফি এর ভিতরে ইনক্লুড ছিল। আপনারা যেনে আবাক হবেন বি টি জি গ্রুপের এই ইভেন্টের ইভেন্ট ফি ছিলো মাত্র ৯৯৯ টাকা।

সকালের নাস্তায় ছিল খিচুড়ি আর ডিম। খাবারের মান ভালোই ছিলো।

cox bazar sea beach ইনানী বীচ

সকালের নাস্তা শেষে আমরা একটি সি এন জি ভাড়া করে রওনা দেই ইনানী বীচের দিকে। এই বিচে যেতে হলে আমাদের ডলফিন মড় হয়ে মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে যেতে হবে। এই মেরিন ড্রাইভের একপাশে উন্মত্ত সমুদ্রের ডাক, অন্যপাশে সবুজ পাহাড়ের নীরবতা। এই মেরিন ড্রাইভ যেন প্রকৃতির দুটি স্বরূপের মুগ্ধ মেলবন্ধন।

সকাল আটটার দিকে আমরা পৌছে গেলাম ইনানি সী বীচে এবং আমার ছোখ পড়লো সুবীশাল সমুদ্রের দিকে। দূরে নীল আকাশের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়া সাদা ঢেউগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, কোনো অজানা গল্প ছুটে আসছে আমার দিকে।

 এখানে  বাতাস ভীষণ চঞ্চল, আর সমুদ্র যেন দূর থেকে ডেকে বলছে —এসো, আমার বিশালতার ভেতর হারিয়ে যাও।

সমুদ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি এখন এগচ্ছি সমুদ্রের দিকে। এখন সকাল হওয়ায় আশেপাশের অনেক দোকানই এখনো খোলেনি। আমার একজোড়া পানিতে ভেজানোর মতো জুতা আর একটি গামছা কেনা প্রয়োজন কিন্তু সেই দোকানগুলো এখনও খোলেনি। একটু সামনে যেতেই দেখি আমার কাঙ্খিত জিনিসগুলোর একটি দোকান। আমি আর দেরি না করে সেগুলো কিনে নিলাম সাথে একটি টুপিও ও নিলাম কারন বীচে  অনেক রোদ ছিলো।

এইযে আমি এই টুপিটি নিয়েছি। এটাতে আমাকে কেমন লাগছে অবশ্যয় কমেন্টে জানাবেন।

আমরা খুব সকালে আসার কারণে এই বীচটি ফাকা পেয়েছি। পর্যটকের আগমন এখনো শুরু হয়নি। অল্প কিছু পর্যটক আছে তারা নিজেদের মত আনন্দ করছে ও ছবি নিচ্ছে।

কয়েকজন প্রস্তুতি ছাড়ায় পানিতে পা ভেজাতে নেমেছে আর সমুদ্রের ঢেউ তাদের পরনের কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছে। বীচের ভেজা নরম বালির ওপর দিয়ে হাটতে আমার খুবিই ভালো লাগছে। তাই একা একা হাটছি আর উপভোগ করছি বিশাল এই সমুদ্রটাকে। সমুদ্রের সৌন্দর্য যেন এক শান্তির জগৎ, যেখানে ঢেউগুলো গান গায় আর নীল জলরাশি চোখের সামনে বিছিয়ে রাখে অনন্ত পথ।

এখানে সময় কাটানোর পর এবার আমরা যাবো সালসা বীচে। আমরা যে সি এন জি রিজার্ভ করেছিলাম সেটি  রাস্তায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

cox bazar sea beach সালসা বীচ

কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেয় আমরা পৌছে গেছি  সালসা বীচের মেইন রাস্তায়। এখান থেকে একটি কাঠের পুল আর একটি বড়ো ঝাউবন পেরিয়ে যেতে হবে বীচে। যাওয়ার পথে বড় বড় গাছ চোখে পড়ছে। বিশাল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের নরম আলো এসে পড়ছে, যেন সবুজের বুক জুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে সোনালি ছোঁয়া।

অনেকক্ষন হাটার পর বিচের দেখা পায়। একানে ও অল্প কিছু পর্যটক সমুদ্রকে উপভেগ করছে। আমিও পানিতে পা ভিজিয়ে সমুদ্রকে উপভোগ করতে চাচ্ছি। তাই উৎসাহী মন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সমুদ্রের দিকে।

সমুদ্রকে সামনে নিয়ে, দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে মনে হলো, যেন পুরো আকাশটা আমাকে আপন করে নিয়েছে।

সমুদ্রের গর্জন, বাতাসের মৃদু ছোঁয়া, আর নীল জলরাশির হাসি—সব মিলিয়ে পৃথিবী যেন আমার আনন্দের সঙ্গী হয়ে গেছে।

আজ কোনো বাধা নেই, কোনো দুঃখ নেই, শুধু আমি আর অফুরন্ত খুশি—এই বিশালতার মাঝে আমি হারিয়ে যেতে চাই, আবার খুঁজে পেতে চাই নিজেকে নতুন করে।

এবার সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে চলে যাবো হিমছড়ি ঝরণা দেখতে। 

cox bazar sea beach হিমছড়ি ঝরণা

হিমছড়ি এসে ৩৫ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে প্রবেশ করি নির্দিষ্ঠ এরিয়ার ভিতরে। পবেশ পথে বেশ কিছু দোকান রয়েছে। কিছুকক্ষন হাটার পর পৌছে গেছি হিমছড়ি ঝর্নায়। এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ঝর্নায় পানি খুবিই কম। তাই আমরা এখানে বেশি সময় নষ্ট না করে এখান থেকে বেরিয়ে পড়ি এবং চলে যায় খাবারের হোটেলে যেখানে সকালের নাস্তা করেছিলাম।

দুপুরের খাবার

আমাদের দুপুরের খাবারে ছিল মুরগির মাংস, ভাত, সবজি আর ডাল।

cox bazar sea beach সুগন্ধা বীচ

দুপুরের খওয়া-দাওয়া শেষ করে দুজন ট্যুরমেট কে সাথেনিয়ে এখন যাচ্ছি সুগন্ধা বিচের দিকে। এখন জোয়ারের সময় হওয়ায় পানি একেবারে কিনারায় চলে এসেছে। আর পর্যটকরা পানিতে নেমে আনন্দ করছে। আমার ও পানিতে নামতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু আমার মোবাইল, মানিব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি রাখার যায়গা না থাকায় নামতে পারছি না। বীচে টাকার বিনিময়ে লকার ভাড়া করা যায় আপনারা চায়লে লকার ভাড়া করে আপনাদের জিনিসপত্র রাখাতে পারেন।

আমি এইধরনের Beach Chair ভাড়া করে নেই। এই Beach Chair এর  ভাড়া প্রতি ঘন্টায় ৬০ টাকা।

সমুদ্রের পাড়ে ছায়াঘেরা বিছানায় শরীর এলিয়ে শুয়ে আছি, চোখের সামনে অবারিত নীল জলরাশি আছড়ে পড়ছে গরম বালির ওপর।

গভীর সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন যেন মনকে ডেকে নেয় এক অনন্ত প্রশান্তির দেশে।

দূরে, যেখানে আকাশ আর সমুদ্র মিশে এক অপার্থিব রেখা এঁকেছে, সেখানে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বারবার।

মনে হচ্ছে বাকি জীবনটা এই সমুদ্রের পাড়ে এভাবে শুয়ে থেকে কাটিয়ে দেয়।

cox bazar sea beach সমুদ্রের নোনা জলে শেরীর ভেজানো

সমুদ্রের নোনা জলে শেরীর ভেজানোর লোভ সামলাতে না পেরে ড্রেস চেন্স করে এগিয়ে যেতে থাকলাম গভীর সমুদ্রের দিকে। 

পানিতে নামার পর বুঝতে পারছি সমুদ্র যতটা মায়াবি ততটাই ভয়ঙ্কর। বিশাল বিশাল ডেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। আর যখন ভাটার দিকে পনি চলে যাচ্ছে তখন পায়ের নিচ থেকে বালি সহ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে খোলা আকাশের নিচে গভীর সমুদ্রের বুকে নোনা জলে ডুবদিতে বেশ ভালোই লাগছে।

অনেকক্ষন সময় কাটিয়ে এবার সমুদ্র থেকে উঠে আসছি। 

এরপর আবার কিছুটা সময় শুয়ে শুয়ে উপভোগ করতে থাকলাম গভির সমুদ্র।

সুর্যের তাপ কিছুটা কমলে আপন মনে হটতে থাকলাম সুগন্ধা বীচ থেকে লাবণী বীচের দিকে আর উপভোগ করতে থাকলাম সমুদ্রের রুপ।

cox bazar sea beach এ হর্সরাইডিং

হাটতে হাটতে চোখে পড়লো একটি ঘোড়া। ঘোড়া দেখার পর আমাকে ধরলো ঘোড়া ভুতে, যেভাবেই হোক উঠতেই হবে এই ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়ার মালিক বললো ঘোড়ার পিঠে উঠে ছবি ওঠা যাবে এবং সে কিছুক্ষন ঘোড়াকে হাটাবে সমুদ্রের বিচে। কিন্তু না  এতে তো  আমার  হবে হবে না, আমি নিজে নিজে ঘোড়া চালাতে চাই। শেষমেষ ঘোড়ার মালিক রাজি হলো। 

প্রথম দিকে গোড়ার পিঠে ব্যালেন্স করতে পারছিলাম ন তবে কিচ্ছুক্ষন পর ঠিক হয়ে যায়। ঘোড়ার মালিক আমাকে বললো লাগামের দড়ি বামে টানলে বামে যাবে আর ডানে টানলে ডানে যাবে আর পা দিয়ে পেটে গুতা দিলে সামনে এগোবে।

অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর একা একা ঘোড়া চালাতে সক্ষম হলাম। ঘোড়ার পিঠে বসে মনে হলো,এই বুঝি কোনো রাজ্য জয়ে বেরিয়েছি; যদিও ঘোড়াটা খুবিই ধীরে চলছিল, আর আমি রাজা হওয়ার ভান করে ব্যালান্স ঠিক রাখতে ব্যস্ত ছিলাম!

ঘোড়া থেকে নেমে একা একা বীচের ধারে হাঁটতে হাঁটতে চলেছি, পায়ে লাগছে নরম বালি, কানে ভাসছে ঢেউয়ের মিষ্টি শব্দ।

হঠাৎই দূরে চোখে পড়লো আমার ট্যুরমেটদের হাসিমুখ—তারা বীচ চেয়ারে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল।

আমি কাছে গিয়ে কিছু মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করলাম, যেন এই সুন্দর দিনটার গল্প স্মৃতির পাতায় চিরকাল জমা থাকে।

ঢাকার ভিতর প্রকৃতির সাথে কিছু সময় কাটাতে জিয়া উদ্যানে ঘুরে আসতে পারেন।

cox bazar sea beach বিদায় বেলা।

সমুদ্রের মায়াবি হাতছানিতে হাটতে থাকলাম সমুদ্রের দিকে,  সূর্য তার শেষ আলোকরশ্মি মেলে দিতে দিতে ধীরে ধীরে দিগন্তের নিচে হারিয়ে যাচ্ছে।

গোধুলির কোমল আলো ছড়িয়ে পড়েছে সোনালি বালির গায়ে, আর সমুদ্রের বুকে পড়ে থাকা প্রতিফলন যেন রঙিন স্বপ্নের মতো দুলছে।

চারপাশে এক অপার্থিব নীরবতা, বাতাসে মিশে আছে বিদায়ের মিষ্টি বিষণ্ণতা—এই মুহূর্ত যেন ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের গোপন কোনো দরজা।

সমুদ্রের অসীম নীলের দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে রইলাম, যেন সে নীরবে বিদায় জানাচ্ছে।

পায়ের নিচে নরম বালির পরশ, কানে মিশে থাকা ঢেউয়ের মৃদু ডাক—সবকিছুই এখন স্মৃতির পাতায় বাঁধাই হওয়ার অপেক্ষায়।

মনের কোণে জমে থাকা অনুভূতিগুলো চেপে রেখে ফিরে চললাম নিজ ঠিকানার পথে।কাল থেকে আবার কর্মব্যস্ততার চেনা স্রোতে ভাসতে হবে।

Leave a Comment

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial