ভালোবাসার স্মৃতি কখনো মুছে যায় না, তারই প্রমাণ তাজমহল রুপে আজও দাঁড়িয়ে আছে আগ্রার বুকে, আর এই আগ্রার তাজমহলের আদলে তৈরি করা হয়েছে বাংলার তাজমহল ( Banglar Tajmahal Narayanganj)

বাংলার তাজমহল অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পেরাব এলাকায়। এটি তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক আহসানউল্লাহ মনি। তাজমহলের পাশে রয়েছে রাজমনি ফ্লিম সিটি। যেখানে রয়েছে পিরামিড, খুদিরামের ফাসির মঞ্চ, বেহুলার বাসর ঘর সহ দৃষ্টিন্দন আরও অনেক প্রতিকৃতি।
আজকের ব্লগে থাকছে কিভাবে আপনি মাত্র ৪৮০ টাকা খরচ করে ঢাকা থেকে এখানে যাবেন এবং তাজমহল ও রাজমনি ফ্লিমসিটি দেখবেন তার বিস্তারিত।
বাংলার তাজমহল কিভাবে যাব ?

তাজমহল যাওয়ার উদ্দেশ্যে আজ সকাল ৯ টার দিকে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি। উত্তরা থেকে আমি প্রথমে যাবো কুড়িল বিশ্বরোড। আপনারা ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে এখানে এসে এখান থেকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা, গুউছিয়া পর্যন্ত বি. আর. টি. সি এর বাস পেয়ে যাবেন। বাসে কুড়িল থেকে ভুলতা, গুউছিয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা। ৩০০ ফিট দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা
আমি টিকিট করে বাসে উঠে জানালার পাশের সিটে বসেছি। জানালা দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে গেলাম নারায়ণগঞ্জের গুউছিয়ায়। এখান থেকে রিকশা নিয়ে যেতে হবে বাংলার তাজমহলে। আমি একটি রিকশা নিয়েছি, রিকশার ভাড়া নিয়েছে ৮০ টাকা।

রিকশা আমাকে তাজমহলের ঠিক সামনে নামিয়ে দিয়েছে। গাউছিয়া থেকে এখানে আসতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের মতো। তাজমহলের সামনের রাস্তা ধরে ভিতরের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে কিছু খাবারের হোটেল দেখতে পেলাম।
বাংলার তাজমহল টিকিট মুল্য

এটিই হলো তাজমহলে ঢোকার টিকিট কাউন্টার। টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা, বলে রাখা ভালো এই এক টিকিট দিয়েয় তাজমহল ও রাজমনি ফ্লিম সিটি দেখা যাবে । আমি টিকিট নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছি।
অল্প টাকায় কক্সবাজার ঘুরে আসতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন । এখানে কিভাবে কম খরচে, একদিনে কক্সবাজার ঘুরে আসবেন তার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একদিনে ঢাকার ভিতরে ঘুরতে চাইলে চন্দ্রিমা উদ্যান হবে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা। চন্দ্রিমা উদ্যানে কিভাবে যাবেন এবং ঘুরবেন তা জানতে এখানে ক্লিক করুন।

এতক্ষণে দেখাপেলাম বহুল আলোচিত সেই বাংলার তাজমলের। মুগ্ধতা যেন শেষই হচ্ছে না। শিল্প আর ভালোবাসার এক অপূর্ব মিশেল চোখের সামনে। ভাবতেই অবাক লাগে, আমাদের বাংলাদেশেই এমন এক অপূর্ব স্থাপত্য রত্ন লুকিয়ে আছে! যেন সত্যিকারের আগ্রার তাজমহল হঠাৎ বাংলার বুকে নেমে এসেছে। সৌন্দর্য, নকশা আর নিখুঁত কারুকাজ দেখে হৃদয়টা ভালোবাসায় ভরে গেল।
বাংলার তাজমহল এর ইতিহাস
বাংলার তাজমহলের মালিক আহসানুল্লাহ মনি একজন ধনবান চলচ্চিত্র নির্মাতা।তিনি ২০০৩ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং এটি ২০০৮ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।প্রকল্পটির জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
এটি নির্মাণের কারণ হিসেবে আহসানুল্লাহ মনি জানান “এই তাজমহলের রেপ্লিকাটি তৈরি করা হয়েছে যেন তার দেশের দরিদ্র মানুষ, যাদের ভারত গিয়ে প্রকৃত নিদর্শন দেখার সামর্থ্য নেই তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নিজের দেশ থেকেই।
এই তাজমহলে মূল তাজের মত একই মার্বেল এবং পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া আগ্রার তাজমহলের সাথে মিল রেখে এর চার কোনে চারটি মিনার ও রয়েছে। তাজমহলের সামনে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। একপাশে দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা ও রয়েছে। তাজমহলের পুরো এরিয়াটা সবুজ গাছপালায় ঘেরা যা এর সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে।
রাজমনি ফ্লিম সিটি | রাজমনি পিরামিড

অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর এবার আমি তাজমহলকে বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছি রাজমনি ফ্লিম সিটি দেখতে। রাজমনি ফ্লিম সিটি এখান থেকে কিছুটা দুরে অবস্থিত, পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগবে ২ থেকে ৩ মিনিট। এটিই হলো রাজমনি ফ্লিম সিটির মেইন গেট।

আমি তাজমহলের টিকিট দেখিয়ে প্রবেশ করছি রাজমনি ফ্লিম সিটির ভিতরে। প্রবেশ মুখেই দেখা মিললো এই ধরনের দুজন সুন্দর রমনির যারা মালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে আপনাকে বরণ করার জন্য।
রাজমনি ফ্লিম সিটিতে পা রাখতেই চোখে পড়ে একের পর এক মনোমুগ্ধকর মানুষের প্রতিকৃতি—যেন জীবন্ত ইতিহাসের ছবি। চারপাশ ঘিরে রয়েছে সবুজ লতা-পাতা আর বাহারি রঙের ফুলে সাজানো এক স্বপ্নময় জগৎ। প্রকৃতি আর শিল্পের এমন অনন্য মেলবন্ধন সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রতিটি কোণ যেন একেকটি গল্প বলে—মানুষের প্রতিকৃতি, সবুজে মোড়ানো পথ আর রঙিন ফুলের উৎসবে মুখর রাজমনি ফ্লিম সিটি।

এটিই হলো রাজমনি ফ্লিমসিটির প্রতীকী পিরামিড—কল্পনা আর শৈল্পিকতার এক অনন্য সৃষ্টি। আমি এই পিরামিডের ভিতরে যাচ্ছি। ভিতরটা খুবই অন্ধকার। পরিবেশটা ও বেশ ভয়ানক । ঢুকতেয় চোখে পড়েছে কাফনে মোড়ানো লাশ, মমি সহ আরও অনেক ভয়ানক প্রতিকৃতি।

এখন যেটা দেখতে পাচ্ছেন সেটি হলো খুদিরামের ফাঁসির মঞ্চ। এটি আসল ফাঁসির মঞ্চ অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে।

এটাই বেহুলার বাসরঘরের প্রতীকী ঘর—লোককথা আর ভালোবাসার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এখানে আরও কিছু সুসজ্জিত ঘর রয়েছে যেখানে সিনেমা বা নাটকের শুটিং করা হয়।

এখন যেগুলো দেখছেন, সেগুলো এক সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল—আগের দিনের সিনেমাগুলোর দৃশ্যায়নে ব্যবহৃত হয়েছিল ঠিক এই জিনিসগুলো। প্রতিটি উপকরণ যেন বহন করে নিয়ে যায় বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি অতীতের স্পর্শ।

এবার চলে যাচ্ছি রঙিন মাছের মেলায়। এখানে বিভিন্ন জাতের রঙিন মাছ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
রাজমনি ফ্লিমসিটিতে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য রয়েছে কিছু আকর্ষণীয় রাইডের ব্যবস্থা, যা তাদের আনন্দে ভরিয়ে তুলবে। তবে এসব রাইড উপভোগ করতে হলে নিতে হবে আলাদা টিকিট, যার মূল্য জনপ্রতি মাত্র ৫০ টাকা। পরিবারসহ ঘুরতে এলে ছোটদের জন্য এটি হতে পারে বাড়তি এক আনন্দঘন উপহার।

অনেকটা সময় ধরে ঘুরলাম রাজমনি ফ্লিমসিটির আনাচে-কানাচে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শৈল্পিক নির্মাণ আর বিনোদনের নানা আয়োজন সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল। আজকের ঘোরাঘুরি এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আবার নতুন কোনো ভ্রমণে, নতুন কোনো গল্প নিয়ে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
বাংলার তাজমহল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।